ভূমিকা:
খরস্রোতা পদ্মানদী বিধৌত জেলা রাজবাড়ী। পদ্মা নদীর কোলে গড়ে ওঠা এ জেলা পরিচিতি পেয়েছে ‘পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী’ হিসেবে। দেশের দক্ষিণ বঙ্গের ২১ টি জেলার প্রবেশদ্বার ও পদ্মা-যমুনার মিলনস্থল গোয়ালন্দ এ জেলাকে করেছে স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট মন্ডিত। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে এ জেলার বিশেষ ভৌগোলিক বৈশিষ্ট, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস , ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন ও সংস্কৃতিকে বিবেচনায় রেখে এ জেলার স্বাতন্ত্র্যকে বিকশিত করার লক্ষ্যে কার্যকরভাবে জেলা ব্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলাকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল তুলে ধরা সম্ভব। এর মাধ্যমে রাজবাড়ী জেলার স্বকীয়তা সংরক্ষণ ও পরিচিত বৃদ্ধির পাশাপাশি এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাবে, যা এ অঞ্চলের ও দেশীয় সামগ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জেলা পরিচিতি:
পদ্মা নদী: পদ্মা নদী (Padma River) মূলত গঙ্গার নিম্ন স্রোতধারার নাম, আরও নির্দিষ্টভাবে বলা যায় গোয়ালন্দ ঘাটে গঙ্গা ও যমুনার সঙ্গম স্থলের পরবর্তী মিলিত প্রবাহই পদ্মা নামে অভিহিত। এককালীন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গোয়ালন্দ-চাঁদপুর স্টিমার চলাচল পথের অধিকাংশই এই নদী জুড়ে রাজবাড়ী জেলার উত্তরে পদ্মা নদী অবস্হিত।
রাজবাড়ী জেলা ব্র্যান্ডিং: “পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী।”
“The Daughter of the Padma, Rajbari”
শ্লোগান: “পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী
তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি”
“The Daughter of the Padma, Rjabari is our pride”
রাজবাড়ীতে পদ্মা নদীর আকর্ষণ সমূহ:
রাজবাড়ী জেলার পর্যটন অঞ্চল/দর্শনীয় স্থানসমূহ:
1। মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র: বিষাদ সিন্ধু খ্যাত মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি বিজড়িত পৈত্রিক নিবাস পদমদীতে মীর মশাররফ হোসেন ও তাঁর স্ত্রীর সমাধিকে ঘিরে ১৯৯৯ সালে তৈরী করা হয় মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন দুই কোটি তিপান্ন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা ব্যয়ে দুই একর জমির উপর স্মৃতি কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। নির্মিত এই স্মৃতি কেন্দ্রে একটি পাঠাগার, একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অতিথি কক্ষ, সভা কক্ষ, মিউজিয়াম, ডাইনিং রুম প্রভৃতি তৈরী করা হয়েছে। মীরের আবক্ষ মূর্তি যে কোন দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ স্মৃতি কেন্দ্রে মীর ভক্তদের পাশাপাশি শীত মৌসুমে প্রচুর পর্যটকের ভীড় জমে।
স
2। শাহ পাহলোয়ানের মাজার: রাজবাড়ী অঞ্চলে ষোড়শ শতকে ধর্ম প্রচারের জন্য আগমন করেন শাহ পাহলোয়ান এর মত আউলিয়ারা। ১৪৮০ হতে ১৫১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শাহ পাহলোয়ান বাগদাদ শরীফ পরিত্যাগ করে ফরিদপুর অঞ্চলে এসে চন্দনা নদীর তীরে বাসস্থান নির্মাণ করে উপাসনা করছিলেন। কথিত আছে, শাহ পাহলোয়ান মৃত্যুর সময় শিষ্যদের তাঁর কবর পূর্ব-পশ্চিম লম্বা-লম্বি দিতে বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর শিষ্যবর্গ প্রচলিত বিধানমতে যথানিয়মে তাকে কবরস্থ করেন। কিন্তু সকালে দেখা গেল, তাঁর কবর ঘুরে পূর্ব-পশ্চিম লম্বা-লম্বি হয়ে গিয়েছে। শাহ পাহলোয়ানই রাজবাড়ী অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের ভিত রচনা করে গেছেন।
3। দাদশী মাজার শরীফ: রাজবাড়ী শহর থেকে রেল লাইন ধরে পূর্বদিকে ৩ কিঃমিঃ দূরে দাদশী খোদাই দরগা। ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে কামাল শাহ নামক এক আউলিয়া ষোড়শ শতকে এতদঞ্চলে আগমন করেন। ১৮৯০ সালে গোয়ালন্দ ঘাট পর্যন্ত রাজবাড়ী রেল লাইন স্থাপনের সময় জঙ্গলের মধ্যে দরগাটির সন্ধান মিলে। সেই হতে দরগাটি এ অঞ্চলের মানুষ খোদাই দরগা নামে কামাল শাহ আউলিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছেন।
4। জামাই পাগলের মাজার: রাজবাড়ী শহরের ৬ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পূর্বে আহলাদিপুর মোড়ে জামাই পাগলের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে একটি শেড নির্মিত হয়। ১৯৬০ সালের দিকে জামাই পাগল নামে এক ব্যক্তিকে সেখানে নেংটি পরা অবস্থায় শেওড়া গাছের নীচে মজ্জুম অবস্থায় দেখা যেত। তাকে কেহ প্রশ্ন করলে তিনি একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করতেন। তার মৃত্যুর পর উক্ত স্থানে জামাই পাগলের মাজার নামে একটি মাজার গড়ে উঠেছে। লোকশ্রুতি আছে জামাই পাগল এক বোবা মেয়েকে পানিতে চেপে ধরে ছেড়ে দিলে সে কথা বলতে শুরু করে।
5। নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির: বালিয়াকান্দি থানার নলিয়া গ্রামে একটি জোড় বাংলা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এর গঠন বিচিত্র। এ মন্দিরটি ১৭০০ সালে তৈরী বলে পন্ডিতগণ মনে করেন।
6। সমাধিনগর মঠ: (অনাদি আশ্রম): বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নে ১৯৪০ সালে স্বামী সমাধী প্রকাশরণ্য এ মঠটি নির্মাণ করেন যার উচ্চতা ৭০ ফুট (গম্বুজসহ), দৈর্ঘ্য প্রায় ৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৫০ ফুট। এটি অনাদি আশ্রম বলে পরিচিত। স্বামীজী এ আশ্রমের মাধ্যমে ঐ এলাকার মানুষকে আলোর পথে অগ্রায়ণ করে গেছেন।
7। রথখোলা সানমঞ্চ: রাজবাড়ী শহর থেকে দুই স্টেশন পশ্চিমে প্রাচীন হড়াই নদীর তীরে বর্তমান পদ্মার কাছাকাছি বেলগাছি একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান। বেলগাছির অদূরে হাড়োয়ায় স্থাপিত হয়েছে কষ্টি পাথরের মদন মোহন জিউর। মদন মোহন এর মূর্তিটি পাল আমলের। বেলগাছিতে রাম জীবনের নামে গড়ে ওঠে আখড়া। রাম জীবনের স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে সেখানে সানমঞ্চ ও দোলমঞ্চের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
8। নীলকুঠি: ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর নীলকরদের অত্যাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং প্রজা সাধারণ অতিষ্ট হয়ে সংঘবদ্ধভাবে নীলকরদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ায়। শুরু হয় নীলবিদ্রোহ। রাজবাড়ীতে নীলবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এ সময় বালিয়াকান্দি থানার সোনাপুরের হাশেম আলীর নেতৃত্বে শত শত চাষী নীলকর ও জমিদারদের বিরুদ্ধে নীল বিদ্রোহে অংশ নেয়। বহু স্থানে নীলকুঠি আক্রমণ করে ও কাচারী জ্বালিয়ে দেয়। এ অঞ্চলের বসন্তপুর, বহরপুর, সোনাপুর, বালিয়াকান্দি, নাড়ুয়া, মৃগী, মদাপুর, সংগ্রামপুর, পাংশার নীলচাষীরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। ফলে ১৮৬০ সালে বৃটিশ সরকার নীল কমিশন বসান এবং নীল চাষ স্বেচ্ছাধীন ঘোষণা করেন। ধীরে ধীরে কৃত্রিম নীল উদ্ভাবিত হয় এবং প্রাকৃতিক নীল চাষ বন্ধ হয়ে যায়।
৩. জেলা-ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্য:
রাজবাড়ী জেলার চলমান উদ্যোগ ও সম্ভাবনাসমূহকে বিকশিত করাসহ জেলার সর্বস্তরের মানুষের আশা আকাঙক্ষা, ঐতিহ্য, গৌরবকে দেশ বিদেশে ভাস্বর করে তোলার লক্ষ্যে সকলের একাত্ম হয়ে কাজ করার মাধ্যমে জেলার সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো রাজবাড়ী জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের মূল উদ্দেশ্য। জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
৪. জেলা-ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়:
রাজবাড়ী জেলার পর্যটন শিল্পকে ধারণ করে জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও লোকজ ঐতিহ্য ও স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্পৃক্ত করে পর্যটনকে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয় নির্বাচন করা হয়েছে।
৫. পর্যটনকে ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয় হিসেবে নির্বাচনের যৌক্তিকতা :
রাজবাড়ী জেলার পদ্মা নদী কেন্দ্রিক পর্যটন যেন প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়। এখানে রয়েছে জলসম্পদের এক বিপুল আধার। পদ্মার নৈসর্গিক দৃশ্য সব ধরনের পর্যটককে মুগ্ধ করবে। এছাড়া রাজবাড়ী জেলা রাজধানী ঢাকার কাছে ও যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ ও কম খরচের হওয়ায় এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ সহজেই দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। নদী মাতৃক দেশ হওয়ায় নদী কেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবস্থা দেশের জনগণের মধ্যে আলাদা স্পৃহার সৃষ্টি করবে। একই সাথে পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে রাজবাড়ীতে পর্যটন নগরী গড়ে তুলতে পারলে তা পদ্মা নদীর নাব্যতা বজায় রাখা, নদী শাসনকে সঠিক রাখা এবং নদীর ভাঙন রোধ করে তীরবর্তী জনসাধারণকে রক্ষায় তাৎপর্যপূর্ন ভূমিকা রাখবে। পর্যটনকে ব্র্যান্ড করার কারণসমূহ নিম্নরূপ:
৬. লোগো ও ট্যাগ:
জেলা ব্র্যান্ডিং এর স্লোগানঃ |
“পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী তাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি”
|
জেলা ব্র্যান্ডিং এর লোগোঃ |
|
৭. রাজবাড়ী জেলার পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা :
এ জেলায় বছরে আনুমানিক 25,000 (পঁচিশ হাজার) পর্যটকের আগমন ঘটে। রাজবাড়ী জেলায় পর্যটকদের আবাসনের সুব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মালিকানায় একাধিক রেস্ট হাইস ও আবাসিক হোটেল রয়েছে; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-রাজবাড়ী সার্কিট হাউস, পাংশা ডাকবাংলো, গোয়ালন্দ ডাকবাংলো, বালিয়াকান্দি ডাকবাংলো, হোটেল পার্ক, গুলশান বোর্ডিং, প্রাইম হোটেল, মিড টাউন হোটেল, হোটেল লতিফ, নিরালা হোটেল । এ সমস্ত রেস্ট হাউসে ও হোটেলে থাকা ও খাওয়ার সুবন্দোবস্ত রয়েছে। নদী ভ্রমণের জন্য নৌকা ও স্পিড বোট পাওয়া যায়। সড়ক পথে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ ভালো ও সহজলভ্য।
৮. কাঙ্ক্ষিত ফলাফল :
পর্যটনকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে নিন্মোক্ত ফলাফলসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে সার্বিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে:
৯. পর্যটন শিল্পের শক্তি, দূর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ:
সার্বিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সুবিধার্থে প্রাথমিকভাবে পর্যটনের নিম্নোক্ত শক্তি, দূর্বলতা, সুযোগ ও ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা হয়েছে:
শক্তি :
|
দূর্বলতা :
|
সুযোগ :
|
ঝুকিঁ :
|
ক. শক্তি:
পদ্মা নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: রাজবাড়ী জেলার অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় পদ্মানদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। খরস্রোতা পদ্মা এক ভয়াল সৌন্দর্যের আধার। পদ্মার বিদ্যমান সৌন্দর্য পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে বিরল। পদ্মার তীর, চর এবং পদ্মায় নৌ বিহার এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেয়। বর্ষার প্রমত্তা পদ্মা, জেলেদের মাছ শিকার, রাতের নদীতে মাছ ধরার নৌকায় মিটিমিটি জ্বলা বাতি, পূর্নিমা রাতের রূপালী পদ্মা, শরতের কাশফলে ঢাকা পদ্মার চর, আর শীত থেকে গ্রীষ্ম ঋতুতে পদ্মার চরে ভ্রমন, পিকনিক, শ্যুটিং আর নদীর স্বচ্ছ পানিতে লাফালাফি ঝাপাঝাপির এক মুখরিত সুযোগ এনে দেয় পদ্মা নদী।
রাজবাড়ীতে যোগাযোগের সুব্যবস্থা : রাজবাড়ী ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা । ঢাকা থেকে সড়ক পথে এর দূরত্ব মাত্র ১১৮ কি.মি.। এখানকার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ঢাকা বিভাগের সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি জেলার প্রবেশদ্বার । এছড়াও এখানে রয়েছে কুষ্টিয়া ও রাজশাহী জেলার সাথে রেলপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। জেলায় অভ্যন্তরীন রেল যোগাযোগের সুযোগ। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথেও রয়েছে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সহজেই মানুষ এখানে বেড়াতে আসতে পারে।
বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব:
রাজবাড়ী জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ যারা এ শিল্প .সাহিত্য, সংস্কৃতিতে দেশে ও দেশের বাইরে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হচ্ছেন-মীর মশাররফ হোসেন, মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী, কাজী আবদুল ওদুদ, কাজী মোতাহার হোসেন, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, ফাহমিদা খাতুন, কাজী আনোয়ার হোসেন, চিত্রশিল্পী কাজী আবুল কাশেম, চিত্রশিল্পী রশিদ চৌধুরী, ডা.আবুল হোসেন, কাঙ্গালিনী সুফিয়া প্রমুখ। এসব ব্যক্তিবর্গের জন্মভূমি হিসেবে রাজবাড়ী জেলা ঐতিহাসিক, শিল্প ও সাহিত্যানুরাগীসহ সব ধরনের পর্যটকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করবে।
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অবলোকন:
রাজবাড়ী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের লাল ভবন, শাহ পাহলোয়ানের মাজার, নলিয়া জোড় বাংলা মন্দির, সমাধিনগর মঠ (অনাদি আশ্রম), নীলকুঠি, পাচুরিয়া জমিদার বাড়ি প্রভৃতিসহ এ জেলায় প্রাচীন আমলের বহু ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বিদ্যমান। এসব প্রাচীণ নিদর্শনসমূহ পর্যটকদের মনের খোরাক যোগাবে।
কিংবদন্তি:
টাকার মাইট, বানিবহে পুস্কুলাগা, পাংশায় মালু ভাগ্যবানের পুকুর, চাঁদ সওদাগরের ঢিবি, সেকারায় শাহ পাহলোয়ানের পূর্ব পশ্চিম মাজার ইত্যাদি। এসব কিংবদন্তি এ এলাকার পর্যটন আকর্ষণকে আরও বাড়াবে।
খ. সুযোগ:
আবাসন ব্যবসার উন্নয়ন: প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক রাজবাড়ী জেলার বিভিন্ন স্থান ও পদ্মা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এসে থাকেন। পর্যটন মৌসুমে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই এখানে আবাসন ব্যবসার উন্নয়নের প্রভূত সুযোগ রয়েছে।
ইকো পার্ক স্থাপন: দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মিত হলে এ সেতু কেন্দ্রিক ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলা সম্ভব হবে। রাজবাড়ীতে প্রবেশ বা বের হবার পথে পর্যটকরা এ ট্যুরিজম সেন্টারের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
পর্যটক গাইড ও ফটোগ্রাফি ব্যবসা: রাজবাড়ী জেলায় এখন অনেক স্থান রয়েছে যেগুলো সৌন্দর্য-পিপাসু পর্যটকদের আকর্ষণ করে পদ্মা নদীতে ভ্রমণ, বালিয়াকান্দি মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র, লোকোশেড বধ্যভূমি, পাচুরিয়া জমিদার বাড়ি, গোদার বাজার নৌ বন্দর, গোয়ালন্দ ঘাটসহ অন্যান্য পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র পরিদর্শন।
কিন্তু সেসব স্থানে ঘুরে আসার পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে পরিচিতির অভাব এবং অচেনা রাস্তাঘাট।
এই সম্ভাবনাময় সুযোগ কাজে লাগিয়ে এখানে পর্যটক গাইড ব্যবসা গড়ে তোলা হবে। এছাড়াও পর্যটন স্পটে আগন্তুক পর্যটকদের চিত্ত বিনোদনের আকর্ষণীয় মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করার জন্য ফটোগ্রাফি ব্যবসায়ের এক উজ্জ্ব্ল সম্ভাবনা রয়েছে।
পিকনিক স্পটের উন্নয়ন: রাজবাড়ী জেলায় পিকনিক স্পটের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। একারণে এখানে পিকনিকের উদ্দেশ্যে আগত বিপুল-সংখ্যক দর্শনার্থীদের অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। পিকনিক স্পটের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আধুনিক সুবিধা-সংবলিত পিকনিক স্পট তৈরি করা হবে।
পর্যটন ভিলেজ স্থাপন: রাজবাড়ী জেলার সম্ভাবনা বিচার করে পর্যটন ভিলেজ স্থাপন এর প্রকল্প গ্রহণ করা যেতে পারে।
গ. দূর্বলতা:
যোগাযোগ ব্যবস্থা: রাজবাড়ী জেলায় পৌঁছানোর পূর্বে পর্যটকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে পদ্মানদীসহ অন্যান্য দর্শণীয় স্থানের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। পদ্মা নদী কেন্দ্রিক শহর রক্ষা বাঁধ ভাঙ্গনের শিকার। এছাড়াও কিন্তু পর্যটকদের আশায় অনেকটাই বাধসাধে দীর্ঘ পথ ভ্রমণের ক্লান্তি। আর এই ভ্রমণের ক্লান্তি বহুগুণে বৃদ্ধি পায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরাবস্থার জন্য।
প্রশিক্ষিত গাইডের অভাব: রাজবাড়ী জেলায় পৌঁছানোর পূর্বে পর্যটকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে পদ্মানদীসহ অন্যান্য দর্শণীয় স্থানের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। কিন্তু প্রশিক্ষিত এবং উপযুক্ত গাইডের অভাবে পর্যটকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
পর্যটনবান্ধব যানবাহনের অভাব: রাজবাড়ীতে সাধারণ যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হলেও পর্যটন শিল্পের উপযোগী যানবাহন খুব কম। বিশেষ করে পদ্মার বুকে নৌ ভ্রমনের জন্য প্রমোদতরী, ঐতিহ্যবাহী নৌকা, ইয়ট, স্পিড বোট ইত্যাদির অভাব রয়েছে। ফলে পর্যটকরা পদ্মার নৈসর্গিক দৃশ্য উপভোগে সমস্যার সম্মুখীন হন।
রাজবাড়ী ভ্রমনের আরও কিছু দুর্বলতা নিম্নরূপ:
পার্কিংয়ের স্থান |
নির্দিষ্ট কোন স্থান নাই এবং যত্রতত্র পার্কিং করা হয়। |
পাবলিক টয়লেট |
পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের অভাব। |
পোশাক পরিবর্তনের স্থান |
পদ্মার তীরে বা চরে পোশাকপরিবর্তনের কোন স্থান নাই। |
পর্যটন স্পট |
এখানকার পর্যটন স্পটগুলো এখনো পর্যটন শিল্পে উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়নি। |
ঘ. ঝুঁকি:
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: রাজবাড়ী জেলার পর্যটন ব্যবসার উন্নয়নের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা হয় দর্শনীয় স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে। পদ্মা নদীর সৌন্দর্য পর্যটকদের ভ্রমণে উৎসাহী করে তোলে। রাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব পর্যটকদের পদ্মা নদী, চর, পদ্মার তীর সহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণে অনুৎসাহিত করে তোলে।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ :
পদ্মা খুব খেয়ালী। কখনো হয়ে ওঠে কীর্তিনাশা। মাঝে মধ্যেই ভেঙ্গে যাচ্ছে তীরবর্তী জনপদ। বারবার হুমকির মুখে পড়ে গোয়ালন্দ ঘাট। এছাড়া এখানে সেখানে চর জেগে ওঠায় বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে পদ্মার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে রাজবাড়ী জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হবাব সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
পরিবেশ দূষণ:
পদ্মা নদীতে, নদীর চরে এবং অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায় দর্শনার্থীদের ব্যবহৃত জিনিসের অপ্রয়োজনীয় অংশ যেমন- চিপসের প্যাকেট, বিভিন্ন পণ্যের মোড়ক, পানির বোতলসহ আরও অনেক কিছু। এগুলো যেমন সৌন্দর্যের অন্তরায় ঠিক তেমনি পরিবেশকে করছে মারাত্মকভাবে দূষিত।
১০. জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মুল্যবোধকে ব্র্যান্ডিং এর সাথে সম্পৃক্তকরণ : পর্যটন ছাড়াও রাজবাড়ী জেলার অনেক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রসিদ্ধ খাবার রয়েছে। দৌলতদিয়াকে কেন্দ্র করে এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন স্থাপন করার কার্যক্রম চলমান।
১১. জেলা ব্র্যান্ডিং কর্ম-পরিকল্পনা:
জেলা ব্র্যান্ডিং বাস্তবায়নের জন্য তিন বছর মেয়াদী নিন্মোক্ত কর্ম-পরিকল্পনা অনুসরণ করা হবে:
কর্ম-পরিকল্পনা ছক
ক্রমিক নম্বর |
কার্যক্রম |
কর্ম-সম্পাদন সূচক |
সময় |
দায়িত্ব |
সহায়তাকারী |
১. |
ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয় নির্দিষ্টকরণ |
বিষয় চিহ্নিত |
জুন ২০১৭ |
সংশ্লিষ্ট কমিটি |
জেলার অন্যান্য অংশীজন |
২. |
উদ্দেশ্য ও কাঙ্খিত ফলাফল নির্ধারন |
উদ্দেশ্য ও কাঙ্খিত ফলাফল নির্ধারিত |
২০১৭ |
জেলা কমিটি |
জেলার অন্যান্য অংশীজন |
৩ |
ব্র্যান্ডিং লোগো ও ট্যাগ লাইন নির্ধারণ |
লোগো ও ট্যাগ লাইন চিহ্নিত |
জুন ২০১৭ |
সংশ্লিষ্ট কমিটি |
জেলার অন্যান্য অংশীজন |
৪ |
ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য নির্বাচিত বিষয়ে জেলার বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ |
প্রতিবেদন |
২১০৭ |
সংশ্লিষ্ট কমিটি |
জেলার অন্যান্য অংশীজন |
৫ |
উদ্যোগের শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ এবং ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ |
এ- সংক্রান্ত প্রতিবেদন |
আগস্ট ২০১৭ |
সংশ্লিষ্ট কমিটি |
জেলার অন্যান্য অংশীজন |
৬ |
ব্র্যান্ড কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়ন |
পরিকল্পনা প্রণীত |
জুন ২০১৭ |
জেলা কমিটি |
জেলার অন্যান্য অংশীজন |
৭ |
বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন কমিটি গঠন |
কমিটি গঠিত |
জুন ২০১৭ |
জেলা কমিটি |
সরকারি কর্মচারি ও জেলার অন্যান্য অংশীজন |
৮ |
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন |
বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন |
জুন ২০১৯ |
জেলা কমিটি |
জেলার অন্যান্য অংশীজন |
৯ |
জেলা ব্র্যান্ড বুক প্রণয়ন |
ব্র্যান্ড বুক প্রণীত |
অক্টোবর ২০১৭ |
সংশ্লিষ্ট কমিটি |
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস